গ্যাস সরবরাহ কমার অজুহাতে বাস ও অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়

ফিলিং স্টেশনে গ্যাসের সরবরাহ ও চাপ কম থাকায় কুমিল্লার বিভিন্ন রুটে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে কোথাও ৫০ টাকা, কোথাও ২০ টাকা ও কোথাও ১০ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় থেকে বরুড়া উপজেলার আড্ডা পর্যন্ত অটোরিকশা ও বাসে যাতায়াত করে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার চিত্র পাওয়া গেছে। যাত্রীরা বলছেন, কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় থেকে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। গতকাল নেওয়া হয় ৩০ টাকা। বলাকা বাসে কুমিল্লার জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল থেকে বরুড়া পর্যন্ত ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। গতকাল নেওয়া হচ্ছিল ৫০ টাকা করে। বরুড়া থেকে কুমিল্লায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা। গতকাল নেওয়া হয় ৮০-১২০ টাকা করে।

গ্যাস–সংকটের কারণে বরুড়ার চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ডে বাহনও কম দেখা গেছে। এতে ঘরমুখী যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

বলাকা বাসে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় বরুড়া উপজেলার খোশবাশ উত্তর ইউনিয়নের অলিতলা গ্রামের আজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকালে বরুড়া থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ৫০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিয়ে কুমিল্লা শহরে এসেছেন। কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। একই বাসের যাত্রী বেওলাইন গ্রামের আবদুল কাদের বলেন, ৫০ টাকার ভাড়া ৭০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

বলাকা বাসের চালক খোকন মিয়া বলেন, এক হাজার টাকার গ্যাস কিনেছেন দুই হাজার টাকা দিয়ে। তাই ১০ থেকে ২০ টাকা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন। গ্যাসের পাম্প বন্ধ থাকায় গ্যাস–সংকট।

বিকেলে বরুড়া থেকে কুমিল্লায় ফেরার পথে বলাকা বাসের ভাড়া আদায়কারী আলী হোসেন বলেন, ‘কুমিল্লায় গ্যাস পাইনি। ফেনী থেকে গ্যাস ভরেছি বাসে। দ্বিগুণ দামে গ্যাস কিনেছি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া তামজীদ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী ইউসুফ মোল্লা বলেন, গত শনিবার রাত থেকে ফিলিং স্টেশন বন্ধ। গ্যাস সরবরাহ নেই। কোনো গ্যাস বিক্রি করতে পারছেন না। এতে সমস্যা হচ্ছে।

ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে কুমিল্লা মোটর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলী মনসুর ফারুকের মুঠোফোনে গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, বাসভাড়া বাড়ানো হয়নি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় কেউ হয়তো অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

এদিকে গ্যাস সমস্যা নিয়ে গত শনিবার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ বিশেষ জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে এলএনজি (লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সমগ্র কুমিল্লা, ফেনী ও চাঁদপুর জেলায় গ্যাসের স্বল্পচাপ ও কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকতে পারে। আগামী ছয়-সাত দিন এ অবস্থা বিরাজমান থাকতে পারে।

বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শংকর মজুমদার বলেন, পাইপলাইনে গ্যাসের চাপ কম। ওই কারণে কোথাও সরবরাহ নেই। কোথাও স্বল্পচাপ আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *